শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ, ১৪৩১
রূপালী ডেস্ক।।
বিভিন্ন প্রতিকূলতা পেরিয়ে গত ছয় বছর যাবৎ ঢাকা-বরিশাল আকাশপথ জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও দেখা দিয়েছে নানান জটিলতা। তলানিতে থাকা বরিশাল বিমানবন্দরের সেবার মানের পাশাপাশি বর্তমানে দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
১৯৮৫ সালে এ বিমানবন্দরটি নির্মিত হলেও ১০ বছর পর সর্বপ্রথম এরোবেংগল এয়ারলাইনসের বিমান ডানা মেলে। এরপর যাত্রী চাপ থাকলেও নানান জটিলতায় একাধিকবার অচল করে রাখা হয় এ বিমানবন্দরটি। দীর্ঘ জটিলতা কাটিয়ে ২০১৫ সালে এ বিমানবন্দরে সরকারি বিমান বাংলাদেশের পাশাপাশি বেসরকারি ইউএসবাংলা ও নভোএয়ার প্রতিদিন সার্ভিস চালু করে। বর্তমানে ইউএসবাংলা সকাল-বিকাল উভয় প্রান্ত থেকে দুটি এবং বিমান বাংলাদেশ ও নভোএয়ার একটি করে উড়োজাহাজ সার্ভিসে রেখেছে। তবে সেবার মান নিয়ে দেখা দিয়েছে নানান প্রশ্ন। একাধিক যাত্রী সেবার মান ও কর্মরতদের উদাসীনতার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এরই মধ্যে বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নে নির্মিত বিমানবন্দর এলাকা নদীভাঙন কবলিত হওয়াসহ বাউন্ডারি ওয়াল, রানওয়ে ও টার্মিনাল বিল্ডিং মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এ বিষয়টি উল্লেখ করে বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। অতি সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বরিশাল বিমানবন্দরের নানান সমস্যা তুলে ধরা হয়। অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) সুকেশ কুমার সরকার, বরিশাল বিমানবন্দরের ম্যানেজার ও বেবিচকের নির্বাহী প্রকৌশলী চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ১৩ জানুয়ারি দাখিলকৃত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন রানওয়ের উত্তর প্রান্তে ৭৫ মিটারের ভেতরে চলে এসেছে নদ। চলমান ভাঙন অব্যাহত থাকলে এ বিমানবন্দর অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উড়োজাহাজ ওঠানামায় ঝুঁকি রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও প্রতিবেদনে টার্মিনাল ভবনের নাজুক দশাসহ নানান দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে তিনটি সুপারিশও করা হয়েছে। পরিকল্পনা বিভাগের এ সুপারিশের অগ্রগতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা তেমন তথ্য দিতে নারাজ। তবে নদীভাঙনের বিষয়ে অগ্রগতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (সিএ-১) অনুপ কুমার।
জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, বরিশাল বিমানবন্দরের নানান সমস্যার কথা উল্লেখ করে বিষয়টি ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। সে লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে নদীভাঙনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে আগামী বর্ষা মৌসুমের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। খুব শিগ্গিরই বিমানবন্দরের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে ঝুঁকিতে থাকা এ বিমানবন্দরের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম শ্লোথ গতিতে চলমান থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এ রুটে নিয়মিত যাতায়াতকারীসহ সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, ঝুঁকিপূর্ণ এ বিমানবন্দরের উন্নয়নের বিষয়ে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। টার্মিনালে নিয়মিত অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, দায়িত্বরত কর্মকর্তার কর্মস্হলে না থাকা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার মারাত্মক ত্রুটি নিয়েই দায়সারাভাবে চলছে নিয়মিত কার্যক্রম। যাত্রীরা অভিযোগ করেন আবহাওয়ার নানান সমস্যার জন্য ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা এসব উড়োজাহাজ প্রায়ই বরিশাল বিমানবন্দরে অবতরণ না করে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কিংবা মাঝ আকাশে অবস্হান করে দুই থেকে চার ঘণ্টা দেরি করে অবতরণ করছে।
একাধিক যাত্রী জানান, গুরুত্বপূর্ণ কাজে আকাশপথে আসলেও তাতেও দেখা দেয় বিপত্তি। বরিশাল বিমানবন্দরে আবহাওয়া ইউনিট না থাকায় এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে বলে জানা গেছে। অথচ প্রতিদিন চারটি ফ্লাইট ওঠানামা করায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এ বিমানবন্দর। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহম্মেদ কায়কাউস বরিশাল সফরকালে বিমানবন্দরের নানান অসংগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি বিমানবন্দরের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন।
বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, দক্ষিণাঞ্চলে নির্মিত তৃতীয় পায়রা সমুদ্রবন্দর ও ব্যাপক উন্নয়নের ফলে নতুন নতুন উদ্যোক্তারা আসছেন। এতে করে যাত্রী চাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি রাত্রিকালীন সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া ইউনিট না থাকায় দিনের বেলাতেই ঝুঁকি থাকছে সেক্ষেত্রে রাতে ঝুঁকি আরো বাড়ছে। তাই ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে তিনি বিমানবন্দরের সার্বিক উন্নয়নের দাবি জানান।সূএ-ইওেফাক।